Showing posts with label গল্প. Show all posts
Showing posts with label গল্প. Show all posts

Saturday, January 19, 2019

হরিন ও তার সিদ্ধান্ত (গল্প)-লিখেছেন শাখাওয়াত হোসেন।

হরিন ও তার সিদ্ধান্ত (গল্প)-লিখেছেন শাখাওয়াত হোসেন।


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম   

গল্পের নাম- হরিণ ও তার সিদ্ধান্ত।
লিখেছেনঃ-শাখাওয়াত হোসেন শিমুল।

একদা একটি হরিণ এক বনে বাস করতো। হরিণটি তার নিজের জন্য এবং বাচ্চাদের জন্য খাবার সন্ধানে বের হলো।এক পর্যায়ে খাবার সন্ধান করতে করতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো।

"কখন যে সন্ধ্যা হলো টের ই পেলাম না," এমনটা বলতে লাগলো হরিণটি।

চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছিল।এখন সে ঠিক করলো তাকে নিজ গন্তব্যে যেতে হবে।সে আগে থেকেই সব জানে কোন পথ দিয়ে গেলে বিপদে পড়বে এবং কোন পথ দিয়ে গেলে বিপদে পড়বে না।
সে দেখলো যে পথটা বাকা হয়ে চলে গেছে ওই পথটা দিয়ে গেলে সময় কম লাগবে তবে শঙ্কার বিষয় হলো ওই পথটায় হিংস্র জানোয়াররা সন্ধ্যার পর ঘোরাঘুরি করে। আর সোজা যে পথটা চলে গেছে সেটা আশংকামুক্ত তবে সময় বেশি লাগবে, হিংস্র জানোয়াররা এই পথে আসে না।

এতক্ষণ হরিণটি দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবছিল। এদিক দিয়ে অন্ধকার আরো ঘনীভূত হয়ে আসছিল।সে সিদ্ধান্ত নিল আমি কাছের যে  রাস্তাটা ওইটা দিয়েই যাব।যদি হিংস্র জানোয়ার আক্রমণ করে  দৌড়ে পালাবো।এই বলে সে রওনা শুরু করলো।যেতে যেতে মনে মনে ভাবতেছে সিদ্ধান্ত কি ঠিক ছিল।
ভাবতেছিল আর সামনের দিকে একপা একপা করে অগ্রসর হচ্ছিল। হঠাৎ আচমকা ৪-৫ টা বাঘ তাকে ঘিরে ধরলো।সে পালাতে চাইলো কিন্তু বাঘের সংখ্যা অধিক হওয়ার কারনে পালাতে পারলো না।সে তার ভুল বুঝতে পারলো তার নিজের জীবন দিয়ে। 

শিক্ষাঃ- আমাদেরকে অনেক সময় খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়।যার ফলে আমরা যেকোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে যায়। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেও কিছু সময় থাকে ভাবার যে, সিদ্ধান্তটা আমার ঠিক হবে না ভুল হবে।তাই হুটহাট করে হরিণের মতো সিদ্ধান্ত নিলে এমনটা হবেই এবং সেটা স্বাভাবিক।                                 
  

Thursday, January 17, 2019

ডায়েরি (গল্প)  - লিখেছেন সাদ সাইফ।

ডায়েরি (গল্প) - লিখেছেন সাদ সাইফ।



অয়ন! এই অয়ন। উঠলি না এখনো। ওদিকে মসজিদে ফজরের জামাত শেষ হয়ে গেল যে! সান্ত¡নার ডাক শুনেই ‘জি বুবু’ বলে তড়িঘড়ি ওঠে পড়ে অয়ন। তারপর অজু বানিয়ে মসজিদের দিকে পা বাড়ায় সে।
সান্ত¡নাও অজু বানিয়ে নেয় নামাজের জন্য। এই হলো সান্ত¡না ও অয়নের দিনের প্রথম কাজ। এদের মধ্যে বয়সের ব্যবধান মাত্র তিন বছরের। সান্ত¡না ক্লাস এইটে আর অয়ন সবেমাত্র ক্লাস ফাইভে। মেধার বিচারে সান্ত¡না অয়নের থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও সম্পর্কের বিচারে তারা দু’জনই সমান। দু’জনের ভেতরে ভালোবাসার কোন কমতি নেই। মোদ্দাকথা অয়ন খুশি সান্ত¡নার মত একটা বোন পেয়ে। আর সান্ত¡নাও খুশি অয়নের মত একটা স্নেহের ছোট ভাই পেয়ে। বলতে গেলে দু’ভাই-বোনের এমন হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কে খুশি তাদের মা-বাবাও। এমনই তো চেয়েছিলেন তারা।
মসজিদ থেকে ফিরে এসে অয়ন আস্তে করে হাঁক দেয়, ‘বুবু’, কোথায় গেলে? ক্ষুধা লেগেছে তো। এটা অয়নের নিত্যদিনের কাজ। নামাজ শেষ হলে বাড়িতে এসে ক্ষুধা বেশি লাগুক বা কম লাগুক বুবুর হাতের নাস্তা তার খাওয়া চাই-ই চাই। এটা অয়নের নৈমিত্তিক কাজ। এইতো কিছুদিন আগেও অয়ন ফজরের নামাজ শেষ করে বাড়িতে এসে ‘বুবু’ বলে ছোট্ট করে ডাক দেয়। কিন্তু কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে ভেতরে যায় সে। গিয়ে দেখে বুবু তার জন্য নাস্তা তৈরি করছে।
অয়নের উপস্থিতি দেখে সান্ত¡না বলল, ‘ভাইয়া তুমি এসে গেছ?’ অয়ন কিছুটা অভিমানের সুরে বলল, ‘পেটে ওদিকে ছুঁচো দৌড়াচ্ছে।’ সান্ত¡না বলে উঠল, ‘এইতো দিচ্ছি ভাইয়া।’ এরপর থেকে সান্ত¡না অয়নের জন্য যথাসম্ভব দ্রুত খেতে দেয়ার চেষ্টা করে। যাতে ভাইটি কষ্ট না পায়। ছোট্ট ভাইটির ছোট-ছোট আবদারগুলোও পূরণ করে করে সান্ত¡না। তাই অয়নও তার বুবুর কাছে আবদার করে। প্রতিদিনকার মতো আজও সান্ত¡না তার স্নেহের ছোট্ট ভাইটির জন্য সকালের নাস্তা রেডি করে রেখেছে। আজকে অয়নের মধ্যে কেমন একটা বিচলিত ভাব দেখতে পেল সান্ত¡না। তাই উৎসুক ভঙ্গিতে বলল, ‘ভাইয়া, কিছু কি বলতে চাচ্ছ আমায়?’ মাথা নেড়ে হ্যাঁসূচক ইঙ্গিতে অয়ন বলে, ‘বুবু, আমাকে একটা জিনিস কিনে দিবা?’
– ‘কী জিনিস?’
– ‘আগে দিবা কিনা তাই বলো?’
– হ্যাঁ, আগে নামটা তো বলো।
– একটা ডায়েরি।
– ‘ও আচ্ছা, কিনে দেব। কিন্তু আমাকে আগে বলো ডায়েরিটা দিয়ে করবেটা কী?’ অয়ন সূরা আসর তেলাওয়াত করে অতঃপর বলে, সময়ের কসম! সকল মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে। এরপর অয়ন বলে, ডায়েরিটায় আমি আমার সারাদিনের কাজ লিখে রাখব। দিনের মধ্যে কত ওয়াক্ত নামাজ জামাতে পড়লাম, কত ওয়াক্ত কাজা পড়লাম, কত সময় বই পড়ছি, খেলা করছি, অন্যান্য কাজে সময় ব্যয় করছি সবই লিখে রাখব তাতে। তাহলে দিনের ভেতর যে সময়টুকু অপব্যয় করছি আস্তে আস্তে তা আর হবে না। এবং একদিন দেখা যাবে আমার কোন সময়ই বাজে কাজে নষ্ট হচ্ছে না। ভাইটির মুখে এমন কথা শুনে সান্ত¡না মহান রবের কাছে শুকরিয়া আদায় করে।
আর এই আনন্দে চোখ থেকে দু’ফোঁটা অশ্রু কখন যে তার হাতে পড়ল খেয়ালই করেনি সে….।

Thursday, January 3, 2019

ভূতের ফেসবুক আইডি [গল্প] । সৈয়দা নাদিয়া হক

ভূতের ফেসবুক আইডি [গল্প] । সৈয়দা নাদিয়া হক

আজ নাকি রাজামশাইয়ের মেজাজ একদম ভালো নেই। তিনি সবাইকে ডেকেছেন। বল কি মন্দা ভূত! এত খুব খারাপ কথা। ভূত রাজার মেজাজ খারাপ হলে তো আমাদের রাজ্যের জন্য একেবারেই ভালো না। হ্যাঁগো, পেঁচাভূত আমিও তাই ভাবছি। তা তুমি যাচ্ছ কোথায়? ঐতো রাজামশাই সবাইকে ডেকেছেন সেখানেই যাচ্ছি। তবে চল দেখি কী হয়েছে ভূত রাজার।
ভূতেরা সব, আজ আপনারা আমার ডাকে উপস্থিত হয়েছেন তার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আমি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। আপনারাতো সবাই জানেন যে, আমরা আজ পর্যন্ত কেউ মানব সমাজের কারো সামনে দেখা দেইনি এবং তাদেরকে কখনো অদৃশ্যভাবে চমকেও দেইনি। কারণ এটা আমাদের সমাজে নিষিদ্ধ। কিন্তু আমাদের রাজ্যে এক সাংবাদিকের নতুন খবর দেখেতো আমি হতবাক। সে জানতে পেরেছে মানবসমাজে প্রত্যেক মানুষ আমাদের খুব কুৎসিত বলে মনে করে আর সে সমাজে আমরা খুবই বিখ্যাত। কিন্তু সেখানে অত্যন্ত বিশ্রী ও কুৎসিত হিসেবে বিখ্যাত। আমাদের না দেখেও তারা নিজের মতো করে আমাদের নিয়ে গল্প তৈরি করে এবং খুব ভয় পায়।
– বলে কিরে! আমরা নাকি মানবসমাজে এত বিখ্যাত।
– হে রে তাইতো শুনলাম।
– কিন্তু আমরা ভূতেরা কি এতই বিশ্রী? ওরা এরকম মনে করে কেন? আমরা দেখতে মোটামুটি ভালোই অন্তত ভয়ঙ্কর নই। আমরা তো কারো ক্ষতি করার কথা ভাবতেই পারি না। বরং মানুষইতো নিজেদের ক্ষতি করতেও দ্বিধাবোধ করে না। ভয়ঙ্করতো তারা।
– না রে মন্দা, সব মানুষ একরকম নয়। অনেক ভালো মানুষও আছে আর তারা খুব ভালো।
– আরে আপনারা চুপ করেন, এভাবে সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বললে কিভাবে হবে। আমিতো আজ আপনাদের সভায় ডেকেছি এ সমস্যার একটা সমাধান করতে। আপনারাই বুদ্ধি দিন কিভাবে এসব ধারণাকে আমরা ভুল প্রমাণিত করতে পারি?
– মহারাজ, যদি মানবসমাজে রাস্তায় রাস্তায় আমরা আমাদের ছবিসহ পোস্টার লাগিয়ে লিখে দেই যে আমরা ভূত। না, না, না, তা হয় না। মানবজাতি বড়ই সন্দেহপ্রবণ, এরা কিছুতেই এটা বিশ্বাস করবে না।
– তাহলে তাদের বিশ্বাস করাতে হলেতো আমাদের দেখা দিতে হবে।
– এটাই সবচেয়ে ভালো। কিন্তু কাকে দেখা দেবো আমরা? তারা তো আমাদের পেয়ে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করার চেষ্টা করবে।
– কিন্তু মহারাজ, আমাদের দিয়ে তাদের কী স্বার্থ সিদ্ধি হবে?
– আরে হবে হবে খু-ব স্বার্থ সিদ্ধি হবে। কিন্তু সবার স্বার্থ আবার এক নয়। একেক জনের একেক রকম স্বার্থ। এই যেমন ধর, একজন বিজ্ঞানী যদি আমাদের পায় তাহলে বোতলে ভরে রেখে দেবে আর পরীক্ষা করে দেখবে আমরা কী দিয়ে তৈরি। আবার সাহিত্যিকের কাছে গেলে তারা আমাদের জীবনপ্রণালি জানতে চাইবে বই লেখার জন্য। একজন সাংবাদিক হলে তো চেষ্টা করবে একটা ফাটাফাটি নিউজ তৈরি করার।
– মহারাজ, আপনি তো মানবজাতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন।
– তা তো জানতেই হবে। নইলে আর রাজা হলাম কিভাবে? তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমি প্রচুর লেখাপড়া করেছি। যাই হোক এবার কাজের কথায় আসা যাক। কী করে আমরা মানবসমাজে আমাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারি?
– মহারাজ, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। বর্তমানে মানবসমাজে একটি জনপ্রিয় যোগাযোগমাধ্যম হলো ফেসবুক। এখানে আমরা আইডি খুলে আমাদের সম্পর্কে সকল তথ্য এবং ছবি দিতে পারি।
– হে হে আমরা শুনেছি ফেসবুকের কথা। এটাই ভালো, এটাই ভালো হবে।
– ঠিক আছে, আপনারা শান্ত হউন। তবে ডাব্বা ভূত তুমি তাই কর। একটা ফেসবুক আইডি খুল। আর সেখানে বিভিন্ন ভূতের সাথে সেলফি তুলে পোস্ট দিবে। আর হ্যাঁ শোন, কভার ফটো হবে এই রাজ্যে দাঁড়িয়ে আমার সাথে তোলা সেলফি। আর প্রোফাইল পিকচার হবে, তোমার নিজের।
– ঠিক আছে মহারাজ, আমি তাই করবো।
– কী খবর ডাব্বা ভূত? বেশ ক’দিন তো হলো, কেমন চলছে ফেসবুক আইডি? মানুষ দেখে কী বলছে?
– রাজামশাই কী আর বলবো, সবাই শুধু কমেন্ট বক্সে জিজ্ঞেস করছে, ‘এটা কোন্ সফ্টওয়ার? এটা কোন্ কার্টুন?’ আবার কেউ বলছে, ‘ফাইজলামি করার আর জায়গা পায় না?’ আর সবাই শুধু হা-হা রিয়েক্ট দিচ্ছে।
– তুমি চেষ্টা করে যাও একদিন হয়তো ঠিকই বুঝবে।
– মহারাজ, এতদিন হয়ে গেল কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। তারা বিশ্বাস তো করছেই না বরং আমরা এখন ফেসবুকে তাদের হাসির পাত্র বলে বিবেচিত। আমরা যে সত্যিকারের ভূত এটা কিছুতেই বিশ্বাস করছে না। আর কী হয়েছে জানেন?
– কী হয়েছে?
– আমি আমার আইডিতে ঢুকতেই পারছি না। কোন মানুষ আমার আইডি হ্যাক করে নিয়েছে। এখন কী করি বলুনতো?
– ধুর আর ভালোই লাগে না। মানবজাতি সত্যিই বড় ভয়ঙ্কর আমাদের আর কোন দরকার নেই তাদের বোঝানোর। তারা তাদের বিশ্বাস নিয়েই থাকুক। এভাবেই যুগ যুগ ধরে মানুষেরা ভূতদের ভয় পেয়ে যাবে।
– ঠিক আছে মহারাজ, তবে তাই হোক।
[গল্প] চ্যালেঞ্জ -লিখেছেন -আবদুল্লাহ নাফি

[গল্প] চ্যালেঞ্জ -লিখেছেন -আবদুল্লাহ নাফি


-আন্তঃগ্রহ বিজ্ঞান পরিষদের সভাকক্ষ। মাঝারি আকারের সভাকক্ষের মাঝখানে গোলটেবিলের চারদিকে অনেকগুলো রিভলবিং চেয়ার। একপাশের একটি চেয়ার অন্য চেয়ারগুলোর চেয়ে কিছুটা আলাদা। দেখেই মনে হয় এটি বিশেষ কারো জন্য নির্ধারিত। সাধারণ চেয়ারগুলোতে বসে আছেন ১৩-১৪ জন লোক। সবার মুখ গম্ভীর, সামনে রাখা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের পর্দায় চোখ। কেউ কারো সাথে কথা বলছে না। বিশেষ চেয়ারটি খালি। কতক্ষণ পর বিপ শব্দে বিশেষ চেয়ারটির পেছনের দেয়ালের একটি জায়গা একপাশে সরে গেল। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন সেদিকে। কয়েক সেকেন্ড পর সেই দরজা দিয়ে এলেন একজন। সাদা পোশাক, হাতে একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস। তার চেহারায় গাম্ভীর্য থাকলেও নির্ভার একটি ভাব রয়েছে। যেন অনেকক্ষণ বিশ্রামের পর উঠে এসেছেন। সভাকক্ষের সবাই উঠে বিশেষ একটি ভঙ্গিতে সম্মান জানালেন আগন্তুককে। তিনি হাত তুলে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বসে পড়লেন নিজের আসনটিতে। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে চোখ ঘুরিয়ে দেখলেন একে একে সবাইকে। তারপর ভরাট কণ্ঠে বলে উঠলেন, সম্মানিত প্রতিনিধিবৃন্দ, আমরা সভার কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। সবাই ওপর-নিচে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলেন।

আন্তঃগ্রহ বিজ্ঞান পরিষদের বিশেষ সভা এটি। সাধারণত প্রতি মাসে একবার এই অডিটোরিয়ামে মিলিত হয় পরিষদের প্রতিনিধিরা; কিন্তু এটি বিশেষ মিটিং, নির্ধারিত মিটিংয়ের এক সপ্তাহ আগেই এই মিটিং ডাকা হয়েছে। মিটিংয়ের জন্য যারা উপস্থিত হয়েছেন তারা বিভিন্ন গ্রহে বিজ্ঞান পরিষদের মনোনীত প্রতিনিধি। বিশাল এই সৌরজগতের সমস্ত মানব সম্প্রদায়ের জীবনব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক এই আন্তঃগ্রহ বিজ্ঞান পরিষদ। আগের দিনে যাদের শাসক বা সরকার বলা হতো অনেকটা তেমনই এই বিজ্ঞান পরিষদের কাজ। সৌরজগতের ১১টি গ্রহে মানববসতি রয়েছে। সব গ্রহের শাসনব্যবস্থা এখন একযোগে পরিচালিত হয় একটি কেন্দ্র থেকে। আর এর নিয়ন্ত্রণ করে বিজ্ঞান পরিষদ। অর্থাৎ পুরো সৌরজগতের শাসনব্যবস্থার সর্বোচ্চ ফোরাম এই বিজ্ঞান পরিষদ। পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতি গ্রহে এক দশকের জন্য একজন করে প্রতিনিধি মনোনয়ন করা হয়। তারাই ওই গ্রহের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

শাসন পরিচালনা ও এর জন্য বিজ্ঞান পরিষদের কাছে জবাবদিহি করতে হয় সেই প্রতিনিধিকে। আসলে তাদের করার খুব বেশি কিছু নেই। জ্ঞান- বিজ্ঞানের উৎকর্ষের ফলে সব কিছুই এখন একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে চলে। মানুষের করার খুব বেশি কিছু নেই। কাজ বলতে যা বোঝায় সেগুলো করে কম্পিউটার আর রোবট। বিজ্ঞানের সাহায্যে প্রায় সব ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে মানুষ, ফলে হাসপাতালগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। মৃত্যু ছাড়া মানুষের কষ্টের আর কোন উপাদান নেই বললেই চলে। অপরাধ কমে গেছে, ফলে আদালত, জেলখানা, পুলিশ কিংবা প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রয়োজনীয়তা অনেক বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। কিছু ক্ষেত্রে যে জনবল দরকার তাতে দশম প্রজাতির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট ব্যবহৃত হচ্ছে। কাজেই প্রতিটি গ্রহে বিজ্ঞান পরিষদের প্রতিনিধিদের খুব বেশি কিছু করার নেই। কেন্দ্রীয় কমান্ড সেন্টারে বসেই তারা গ্রহের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি স্থান থেকে সব কিছুর রিপোর্ট চলে আসে কমান্ড সেন্টারে। প্রত্যেক মানুষের রয়েছে চলাচল ও কর্মকাণ্ডের অবাধ স্বাধীনতা। যে গ্রহেই জন্ম নিক না কেন, সৌরজগতের যে কোন স্থানে বসবাস করার অধিকার রয়েছে তার। প্রতিটি গ্রহের নাগরিক ও সমাজব্যবস্থার মধ্যেও দারুণ সুসম্পর্ক।
বিজ্ঞান পরিষদের সবগুলো পদেই মানব সম্প্রদায়ের সেরা বিজ্ঞানীরা বসে আছেন। বিজ্ঞান মানুষের জীবনকে এমন করেছে যে, বিজ্ঞানে যে যত দক্ষ সে ততটা যোগ্য হিসেবে বিবেচিত। তাই পুরো মানব সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণই এখন বিজ্ঞানীদের হাতে। ৩০ বছর আগে সব গ্রহের বিজ্ঞানীরা মিলে গঠন করেছেন আন্তঃগ্রহ বিজ্ঞান পরিষদ। পরিষদের বর্তমান প্রধান বিজ্ঞানী জেন হিউক। প্লুটোতে জন্ম নেয়া এই বিজ্ঞানীই মূলত সর্বাধুনিক এই শাসনব্যবস্থার রূপকার। তরুণ বয়সেই তিনি মানব সম্প্রদায়ের সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। বর্তমান সভ্যতার যত যুগান্তকারী আবিষ্কার তাতে তারই অবদান বেশি। তিন দশক আগে তার নেতৃত্বেই গঠিত হয় বিজ্ঞান পরিষদ, তার প্রস্তাবিত এই এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী এত প্রশংসিত হয় যে, সব নাগরিক এক বাক্যে এটি মেনে নেয়।

বিজ্ঞানী জেন হিউক বললেন, ‘সম্মানিত প্রতিনিধিবৃন্দ আপনাদের আহ্বানেই আজকের এই সভা। তাই আমি চাই আপনাদের পক্ষ থেকেই আলোচনা শুরু হোক।’
হাত তুলে কিছু বলার অনুমতি চাইলেন বৃহস্পতি গ্রহের প্রতিনিধ থম নু। জেন হিউক সম্মতি দিলেন।
থম নু বললেন, ‘মহামান্য প্রধান, আপনি জানেন মানব সম্প্রদায় একটি দুর্যোগের মুখোমুখি। বেশ কিছুদিন ধরেই একযোগে প্রায় সবগুলো গ্রহের ফসলে নতুন একটি রোগ দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে আমরা প্রায় সব সমস্যাই দূর করেছি; কিন্তু ফসলের রোগ তো কয়েকশো বছর আগেই দূর হয়েছে। প্রথম দিকে বিষয়টিকে তাই আমরা গুরুত্ব দেইনি; কিন্তু সম্ভাব্য সব উপায়ে চেষ্টা করেও আমরা এবারের সমস্যাটি মোকাবেলা করতে পারছি না। এ বিষয়ে আলোচনার জন্যই আজকের বৈঠকের অনুরোধ করেছি আমরা’।
একটানা কথা বলে থামলেন থম নু। জেন হিউক বললেন, ‘আর কেউ কিছু বলবেন?’
এবার বলতে শুরু করলেন পৃথিবীর প্রতিনিধি। তিনি বললেন, ‘মহামান্য প্রধান, যেভাবে ফসলের রোগ ছড়াচ্ছে তাতে আমাদের সব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। আপনি জানেন যে, মানুষ এখনো ক্ষেতে উৎপাদিত খাদ্যই খেতে পছন্দ করে। কৃত্রিম খাদ্য উৎপাদন শুরু করেছি আমরা বহু বছর আগে; কিন্তু সেগুলোর তুলনায় মানুষ প্রাকৃতিক খাদ্যই বেশি খায়। তাই ফসল নষ্ট হলে মানুষ ক্ষুব্ধ হবে। এ বিষয়ে আপনার কাছ থেকে সমাধান চাই আমরা।’
আরো কয়েকজন প্রতিনিধি তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। সবার বক্তব্যের মূল কথা একটিই। অজানা এক ভাইরাসের আক্রমণে সব গ্রহের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছে। যে ক্ষেতে যে ফসল আছে, তাতেই দেখা গেছে আজব এই ভাইরাস। সব গ্রহের বিজ্ঞানীরা মিলেও ভাইরাসটি প্রতিহত করতে পারেনি। মূলত সে কারণেই তিন দিন আগে এ বিষয়ে আন্তঃগ্রহ বিজ্ঞান পরিষদের সভা ডাকার অনুরোধ জানায় শনির প্রতিনিধি। তার প্রেক্ষিতেই আজকের সভা।

সবার বক্তব্য শেষে বিজ্ঞান পরিষদের প্রধান বললেন, ‘আমি এখনই এই সমস্যার কোনো সমাধান দিতে পারছি না। সমস্যাটি নিয়ে আমাদের কাজ করা উচিত। আপনারা যার যার গ্রহের বিজ্ঞানীদের নিয়ে কাজ শুরু করুন। প্রয়োজনে সব গ্রহের বিজ্ঞানীদের নিয়ে একটি গবেষণা দল গঠন করুন। তারা এই সমস্যার সমাধানে চেষ্টা করবে। এটিই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ এখন। আজকের সভা এখানেই শেষ।’ বলে উঠে দাঁড়ালেন জেন হিউক। পেছনের দেয়ালটি আবার খুলে গেল। তিনি চলে গেলেন ওপাশের কক্ষে। প্রতিনিধিদের সবাইকে হতাশ মনে হলো। তারা আশা করেছিলেন প্রধান বিজ্ঞানী হয়তো কোন সমাধান দিবেন এই সঙ্কটের; কিন্তু তেমন কিছু না বলে তিনি গবেষণা করতে বললেন। তাই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।
নিজের কক্ষে এসে বোতাম টিপে ব্যক্তিগত সহকারী রোবটটিকে ডাকলেন জেন হিউক। বললেন, ফসলের নতুন ভাইরাস নিয়ে গ্রহগুলোর কাজের অগ্রগতি আমাকে জানাবে।
রোবটটি বলল, ‘জি মহামান্য; কিন্তু তারা কি পারবে এই সমস্যার সমাধান আবিষ্কার করতে?
‘পারবে, তুমি জানো না মানব সম্পদ্রায়ের মধ্যে কত প্রতিভাবান বিজ্ঞানী আছেন। অবশ্য তুমি তো রোবট, কতটাই বা বুঝবে’।
‘জি, মহামান্য; কিন্তু আপনি সেরা বিজ্ঞানী। আপনি ইচ্ছে করেই এই সমস্যাটি কেন সৃষ্টি করেছেন? আবার তারা সমাধান চাওয়ার পরও দিলেন না।’
‘তাহলে বলি শোন। বিজ্ঞানের কল্যাণে অমরা মৃত্যু ছাড়া প্রায় সব সমস্যাকেই জয় করেছি। সবাই সুখে আছে, চাওয়া মাত্র সব কিছু পেয়ে যাচ্ছে। মানুষের অভাব, কষ্ট বলতে কিছু নেই। এত সুখে থাকতে গিয়ে মানুষের জীবন নিরানন্দ হয়ে যাচ্ছে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি অনেক মানুষের কাছেই জীবন এখন একঘেয়ে লাগতে শুরু করেছে। আসলে মানবজীবন চ্যালেঞ্জ পছন্দ করে। চ্যালেঞ্জ জয় করেই সেই আদিকাল থেকে মানুষ বেঁচে থাকতে অভ্যস্ত। তাই এর ব্যতিক্রম হলে মানুষের মনে বিরূপ প্রভাব পড়বে সেটাই স্বাভাবিক। নতুন কিছু করার সুযোগ না থাকলে মানুষ জীবনকে অর্থহীন মনে করে। তাই নতুন এই ভাইরাসটি সৃষ্টি করে ছড়িয়ে দিয়েছি আমি। মানুষ এখন এই সমস্যার সমাধান নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। এটি সে রকমভাবেই তৈরি করেছি, যাতে সেরা বিজ্ঞানীরা এর সমধান খুঁজে পায়। একটু চেষ্টা করলেই তারা পারবে। তারপর এই চ্যালেঞ্জ জয় করে মানুষ আবার বিজয়ের হাসি হাসবে। স্বস্তি ফিরে আসবে নাগরিকদের মধ্যে। কম্পিউটার নির্ভর মানুষরা আবার চ্যালেঞ্জ জয় করার আনন্দ ফিরে পাবে। বেঁচে থাকার আগ্রহ তৈরি হবে সবার মধ্যে। প্রয়োজনে আবার কিছুদিন পর এরকম একটি কৃত্রিম সঙ্কট দেব আমি তাদের সামনে। যাতে চ্যালেঞ্জ জয় করার মধ্য দিয়ে মানুষ বেঁচে থাকার সার্থকতা খুঁজে পায়’।