আজ নাকি রাজামশাইয়ের মেজাজ একদম ভালো নেই। তিনি সবাইকে ডেকেছেন। বল কি মন্দা ভূত! এত খুব খারাপ কথা। ভূত রাজার মেজাজ খারাপ হলে তো আমাদের রাজ্যের জন্য একেবারেই ভালো না। হ্যাঁগো, পেঁচাভূত আমিও তাই ভাবছি। তা তুমি যাচ্ছ কোথায়? ঐতো রাজামশাই সবাইকে ডেকেছেন সেখানেই যাচ্ছি। তবে চল দেখি কী হয়েছে ভূত রাজার।
ভূতেরা সব, আজ আপনারা আমার ডাকে উপস্থিত হয়েছেন তার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আমি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। আপনারাতো সবাই জানেন যে, আমরা আজ পর্যন্ত কেউ মানব সমাজের কারো সামনে দেখা দেইনি এবং তাদেরকে কখনো অদৃশ্যভাবে চমকেও দেইনি। কারণ এটা আমাদের সমাজে নিষিদ্ধ। কিন্তু আমাদের রাজ্যে এক সাংবাদিকের নতুন খবর দেখেতো আমি হতবাক। সে জানতে পেরেছে মানবসমাজে প্রত্যেক মানুষ আমাদের খুব কুৎসিত বলে মনে করে আর সে সমাজে আমরা খুবই বিখ্যাত। কিন্তু সেখানে অত্যন্ত বিশ্রী ও কুৎসিত হিসেবে বিখ্যাত। আমাদের না দেখেও তারা নিজের মতো করে আমাদের নিয়ে গল্প তৈরি করে এবং খুব ভয় পায়।
– বলে কিরে! আমরা নাকি মানবসমাজে এত বিখ্যাত।
– হে রে তাইতো শুনলাম।
– কিন্তু আমরা ভূতেরা কি এতই বিশ্রী? ওরা এরকম মনে করে কেন? আমরা দেখতে মোটামুটি ভালোই অন্তত ভয়ঙ্কর নই। আমরা তো কারো ক্ষতি করার কথা ভাবতেই পারি না। বরং মানুষইতো নিজেদের ক্ষতি করতেও দ্বিধাবোধ করে না। ভয়ঙ্করতো তারা।
– না রে মন্দা, সব মানুষ একরকম নয়। অনেক ভালো মানুষও আছে আর তারা খুব ভালো।
– আরে আপনারা চুপ করেন, এভাবে সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বললে কিভাবে হবে। আমিতো আজ আপনাদের সভায় ডেকেছি এ সমস্যার একটা সমাধান করতে। আপনারাই বুদ্ধি দিন কিভাবে এসব ধারণাকে আমরা ভুল প্রমাণিত করতে পারি?
– মহারাজ, যদি মানবসমাজে রাস্তায় রাস্তায় আমরা আমাদের ছবিসহ পোস্টার লাগিয়ে লিখে দেই যে আমরা ভূত। না, না, না, তা হয় না। মানবজাতি বড়ই সন্দেহপ্রবণ, এরা কিছুতেই এটা বিশ্বাস করবে না।
– তাহলে তাদের বিশ্বাস করাতে হলেতো আমাদের দেখা দিতে হবে।
– এটাই সবচেয়ে ভালো। কিন্তু কাকে দেখা দেবো আমরা? তারা তো আমাদের পেয়ে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করার চেষ্টা করবে।
– কিন্তু মহারাজ, আমাদের দিয়ে তাদের কী স্বার্থ সিদ্ধি হবে?
– আরে হবে হবে খু-ব স্বার্থ সিদ্ধি হবে। কিন্তু সবার স্বার্থ আবার এক নয়। একেক জনের একেক রকম স্বার্থ। এই যেমন ধর, একজন বিজ্ঞানী যদি আমাদের পায় তাহলে বোতলে ভরে রেখে দেবে আর পরীক্ষা করে দেখবে আমরা কী দিয়ে তৈরি। আবার সাহিত্যিকের কাছে গেলে তারা আমাদের জীবনপ্রণালি জানতে চাইবে বই লেখার জন্য। একজন সাংবাদিক হলে তো চেষ্টা করবে একটা ফাটাফাটি নিউজ তৈরি করার।
– মহারাজ, আপনি তো মানবজাতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন।
– তা তো জানতেই হবে। নইলে আর রাজা হলাম কিভাবে? তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমি প্রচুর লেখাপড়া করেছি। যাই হোক এবার কাজের কথায় আসা যাক। কী করে আমরা মানবসমাজে আমাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারি?
– মহারাজ, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। বর্তমানে মানবসমাজে একটি জনপ্রিয় যোগাযোগমাধ্যম হলো ফেসবুক। এখানে আমরা আইডি খুলে আমাদের সম্পর্কে সকল তথ্য এবং ছবি দিতে পারি।
– হে হে আমরা শুনেছি ফেসবুকের কথা। এটাই ভালো, এটাই ভালো হবে।
– ঠিক আছে, আপনারা শান্ত হউন। তবে ডাব্বা ভূত তুমি তাই কর। একটা ফেসবুক আইডি খুল। আর সেখানে বিভিন্ন ভূতের সাথে সেলফি তুলে পোস্ট দিবে। আর হ্যাঁ শোন, কভার ফটো হবে এই রাজ্যে দাঁড়িয়ে আমার সাথে তোলা সেলফি। আর প্রোফাইল পিকচার হবে, তোমার নিজের।
– ঠিক আছে মহারাজ, আমি তাই করবো।
– কী খবর ডাব্বা ভূত? বেশ ক’দিন তো হলো, কেমন চলছে ফেসবুক আইডি? মানুষ দেখে কী বলছে?
– রাজামশাই কী আর বলবো, সবাই শুধু কমেন্ট বক্সে জিজ্ঞেস করছে, ‘এটা কোন্ সফ্টওয়ার? এটা কোন্ কার্টুন?’ আবার কেউ বলছে, ‘ফাইজলামি করার আর জায়গা পায় না?’ আর সবাই শুধু হা-হা রিয়েক্ট দিচ্ছে।
– তুমি চেষ্টা করে যাও একদিন হয়তো ঠিকই বুঝবে।
– মহারাজ, এতদিন হয়ে গেল কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। তারা বিশ্বাস তো করছেই না বরং আমরা এখন ফেসবুকে তাদের হাসির পাত্র বলে বিবেচিত। আমরা যে সত্যিকারের ভূত এটা কিছুতেই বিশ্বাস করছে না। আর কী হয়েছে জানেন?
– কী হয়েছে?
– আমি আমার আইডিতে ঢুকতেই পারছি না। কোন মানুষ আমার আইডি হ্যাক করে নিয়েছে। এখন কী করি বলুনতো?
– ধুর আর ভালোই লাগে না। মানবজাতি সত্যিই বড় ভয়ঙ্কর আমাদের আর কোন দরকার নেই তাদের বোঝানোর। তারা তাদের বিশ্বাস নিয়েই থাকুক। এভাবেই যুগ যুগ ধরে মানুষেরা ভূতদের ভয় পেয়ে যাবে।
– ঠিক আছে মহারাজ, তবে তাই হোক।