অয়ন! এই অয়ন। উঠলি না এখনো। ওদিকে মসজিদে ফজরের জামাত শেষ হয়ে গেল যে! সান্ত¡নার ডাক শুনেই ‘জি বুবু’ বলে তড়িঘড়ি ওঠে পড়ে অয়ন। তারপর অজু বানিয়ে মসজিদের দিকে পা বাড়ায় সে।
সান্ত¡নাও অজু বানিয়ে নেয় নামাজের জন্য। এই হলো সান্ত¡না ও অয়নের দিনের প্রথম কাজ। এদের মধ্যে বয়সের ব্যবধান মাত্র তিন বছরের। সান্ত¡না ক্লাস এইটে আর অয়ন সবেমাত্র ক্লাস ফাইভে। মেধার বিচারে সান্ত¡না অয়নের থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও সম্পর্কের বিচারে তারা দু’জনই সমান। দু’জনের ভেতরে ভালোবাসার কোন কমতি নেই। মোদ্দাকথা অয়ন খুশি সান্ত¡নার মত একটা বোন পেয়ে। আর সান্ত¡নাও খুশি অয়নের মত একটা স্নেহের ছোট ভাই পেয়ে। বলতে গেলে দু’ভাই-বোনের এমন হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কে খুশি তাদের মা-বাবাও। এমনই তো চেয়েছিলেন তারা।
মসজিদ থেকে ফিরে এসে অয়ন আস্তে করে হাঁক দেয়, ‘বুবু’, কোথায় গেলে? ক্ষুধা লেগেছে তো। এটা অয়নের নিত্যদিনের কাজ। নামাজ শেষ হলে বাড়িতে এসে ক্ষুধা বেশি লাগুক বা কম লাগুক বুবুর হাতের নাস্তা তার খাওয়া চাই-ই চাই। এটা অয়নের নৈমিত্তিক কাজ। এইতো কিছুদিন আগেও অয়ন ফজরের নামাজ শেষ করে বাড়িতে এসে ‘বুবু’ বলে ছোট্ট করে ডাক দেয়। কিন্তু কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে ভেতরে যায় সে। গিয়ে দেখে বুবু তার জন্য নাস্তা তৈরি করছে।
অয়নের উপস্থিতি দেখে সান্ত¡না বলল, ‘ভাইয়া তুমি এসে গেছ?’ অয়ন কিছুটা অভিমানের সুরে বলল, ‘পেটে ওদিকে ছুঁচো দৌড়াচ্ছে।’ সান্ত¡না বলে উঠল, ‘এইতো দিচ্ছি ভাইয়া।’ এরপর থেকে সান্ত¡না অয়নের জন্য যথাসম্ভব দ্রুত খেতে দেয়ার চেষ্টা করে। যাতে ভাইটি কষ্ট না পায়। ছোট্ট ভাইটির ছোট-ছোট আবদারগুলোও পূরণ করে করে সান্ত¡না। তাই অয়নও তার বুবুর কাছে আবদার করে। প্রতিদিনকার মতো আজও সান্ত¡না তার স্নেহের ছোট্ট ভাইটির জন্য সকালের নাস্তা রেডি করে রেখেছে। আজকে অয়নের মধ্যে কেমন একটা বিচলিত ভাব দেখতে পেল সান্ত¡না। তাই উৎসুক ভঙ্গিতে বলল, ‘ভাইয়া, কিছু কি বলতে চাচ্ছ আমায়?’ মাথা নেড়ে হ্যাঁসূচক ইঙ্গিতে অয়ন বলে, ‘বুবু, আমাকে একটা জিনিস কিনে দিবা?’
– ‘কী জিনিস?’
– ‘আগে দিবা কিনা তাই বলো?’
– হ্যাঁ, আগে নামটা তো বলো।
– একটা ডায়েরি।
– ‘ও আচ্ছা, কিনে দেব। কিন্তু আমাকে আগে বলো ডায়েরিটা দিয়ে করবেটা কী?’ অয়ন সূরা আসর তেলাওয়াত করে অতঃপর বলে, সময়ের কসম! সকল মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে। এরপর অয়ন বলে, ডায়েরিটায় আমি আমার সারাদিনের কাজ লিখে রাখব। দিনের মধ্যে কত ওয়াক্ত নামাজ জামাতে পড়লাম, কত ওয়াক্ত কাজা পড়লাম, কত সময় বই পড়ছি, খেলা করছি, অন্যান্য কাজে সময় ব্যয় করছি সবই লিখে রাখব তাতে। তাহলে দিনের ভেতর যে সময়টুকু অপব্যয় করছি আস্তে আস্তে তা আর হবে না। এবং একদিন দেখা যাবে আমার কোন সময়ই বাজে কাজে নষ্ট হচ্ছে না। ভাইটির মুখে এমন কথা শুনে সান্ত¡না মহান রবের কাছে শুকরিয়া আদায় করে।
আর এই আনন্দে চোখ থেকে দু’ফোঁটা অশ্রু কখন যে তার হাতে পড়ল খেয়ালই করেনি সে….।
0 coment rios: