খুদে বাহিনীর গুহা অভিযান মূল : অ্যালান ফিনচ রূপান্তর : হোসেন মাহমুদ। পর্ব -১
পাথুরে টিলার ওপর দিয়ে হাঁটছিল ওরা- ন্যান্সি আর কুর্ট। আরো দু’তিনটা টিলার পর সৈকত। টিলাগুলোর নিচ থেকেই বালিময় সৈকত শুরু হয়েছে। মিশেছে সাগরে। সেখানে খেলছে ওদের ছোট দু’ভাই-বোন- লিন আর ডেভ। কিছুক্ষণ আগে সৈকতে এসেছে ওরা। বড় থেকে ছোট পর্যন্ত ওদের চার ভাই-বোনের প্রত্যেকের মাঝে বয়সের ব্যবধান দু’বছর। সবার বড় কুর্টের বয়স পনেরো। ন্যান্সির তেরো। লিন এগারোতে, আর ডেভের নয় চলছে। লিন আর ডেভ সৈকতে খেলার ছলে বালির প্রাসাদ গড়ছে আর ভাঙছে। আনন্দে আছে ওরা।
ওদেরকে খেলায় মেতে উঠতে দেখে কুর্ট আর ন্যান্সি টিলাগুলো একটু ঘুরে দেখতে গিয়েছিল। বিশেষ করে গুহাগুলোর দিকটা। এর পেছনে একটা কারণ আছে। কাল বিকেলেই তারা মি. ওলসেনের কাছে গল্পটা শুনেছে। মি. ওলসেন দাদু বাড়ির কেয়ারটেকার। শুধু দিনের বেলা থাকেন তিনি। সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তার ডিউটি। সত্তরের কাছে বয়স তার। খুব ভালো আর সাদাসিধে মানুষ। মাঝে মাঝে ওদের গল্প শোনান তিনি। তিনিই বলেছেন, সৈকতের পুবদিকে পাথুরে টিলার নিচে গোটাকয় গুহা আেেছ। প্রকৃতির খেয়ালে সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো। গুহাগুলো খুব পুরনো। মানুষ ওদিকে মোটেই যায় না। গুজব আছে যে কবে কোনকালে জলদস্যুরা এসব গুহার কোনো একটিতে লুট করে আনা ধনরত্ন রেখেছিল। কিন্তু পরে সেগুলো তারা এখান থেকে আর নিতে পারেনি। কারণ, তার কিছুদিন পরেই এক যুদ্ধে জলদস্যু নেতাসহ কয়েকজন মারা পড়ে, বাকিরা আটক হয়ে বাকি জীবন জেলে কাটায়। গুজব গুজবই। তা লোকে শোনে, কিন্তু বিশ্বাস করে কম। তাই কেউ সে গুজবের জিনিস খুঁজতে যায়নি বা গেলেও পায়নি। ওরা দু’জন সে গুহাগুলোর লোকেশন দেখতে গিয়েছিল কৌতূহলী হয়ে। দেখেছে। এখন ফিরে যাচ্ছে লিন আর ডেভের কাছে।
দু’জন সৈকতে ওদের কাছে গিয়ে পৌঁছলো। ঠিক সে মুহূর্তেই ডেভ লাফিয়ে পড়ে অনেক সময় নিয়ে গড়ে তোলা লিনের বালির প্রাসাদের ওপর। চোখের পলকে লীন হয়ে গেল সেটা। প্রতিশোধ নিতে লিনও লাফিয়ে পড়ল ডেভের তৈরি করা প্রাসাদের ওপর। ব্যস, শোধবোধ। হাসিতে ভেঙে পড়ে দু’জন।
এ সময় কমান্ডারের ঘোষণা শোনা গেল- বিকেলের চা পানের সময় হয়ে গেছে। চল, এখন বাড়ি ফিরতে হবে। নইলে দাদি ভীষণ রেগে যাবেন। চা খাওয়ার পর আমাদের পরবর্তী প্ল্যান নিয়ে আলোচনা করব।
সবার বড় হিসেবে চার ভাই-বোনের এ খুদে বাহিনীর কমান্ডার কুর্ট। ন্যান্সি সহকারী কমান্ডার। ছোট দু’জন সৈনিক মাত্র। চার ভাই-বোনের মধ্যে নানা বিষয়ে খুব মিল। প্রায় প্রতি ছুটির দিনেই একটা সময় ঠিক করে নিয়ে পাড়ায় একটা রাউন্ড দেয় তারা। ফলে সবাই তাদের ভালো করেই চেনে। বন্ধুদের কেউ কেউ ওদের নাম দিয়েছে খুদে বাহিনী। ওরা নামটি তেমন পছন্দও করেনি, আবার প্রতিবাদও করেনি। তাই মোটামুটি এ নামটাই চালু হয়ে গেছে ওদের ব্যাপারে। ন্যান্সির কথা, খুদে বাহিনী শুনতে ভালো লাগে না। ওরা তো কোনো কাজ করে না, তাহলে ওদের বাহিনী বলা হবে কেন? তবে ‘গ্রুপ ফোর’ বললে আপত্তি নেই তার। নামটি বেশ আধুনিক। এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে তাদের মধ্যে। শিগগিরই হয়ত নামটা অনুমোদন করবে সবাই মিলে।
টিলায় উঠল ওরা সবাই। কয়েকটি টিলা পেরিয়ে পৌঁছে গেল বাড়ির সীমানার পেছন দিকের দরজায়। খোলাই ছিল সেটা। ভেতরে পা রাখল ওরা। খানিকটা খোলা জায়গা। তা পেরিয়ে চারধাপ সিঁড়ি টপকে পৌঁছে গেল বাড়ির করিডোরে।
প্রথমেই ওরা গেল কিচেনে। দাদি রান্না করছেন। তাকে সাহায্য করছেন দাদু। বেশ ব্যস্ত। দু’জনকে হ্যালো বলল তারা। মাথা ঝুঁকিয়ে সাড়া দিলেন তারা। কিচেন থেকে বেরিয়ে বিশাল ডাইনিং রুমে গিয়ে বসে পড়ল খুদে বাহিনী। একটু পরই দাদি প্লেট ভর্তি স্যান্ডউইচ এনে রাখলেন টেবিলে। পেছনে এলেন দাদু। তার হাতে বড় জগ। ফলের রস ভরা।
নীরবতার মধ্যে খাওয়া শেষ হয়। ঘড়ির টিক টিক শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ ছিল না ঘরটিতে।
আমরা এগুলো ধুয়ে দিচ্ছি দাদি, বলল ন্যান্সি।
তার কথা শেষ হতে এগিয়ে আসে অন্যরা। কাপ-পিরিচ-ডিশগুলো কিচেনে নিয়ে গিয়ে ধুয়ে ফেলে তারা। তারপর জায়গামত রেখে দেয়।
এবার সবাই গিয়ে জড়ো হয় কমান্ডার কুর্টের ঘরে। বন্ধ করে দেয় দরজা। ন্যান্সি আর লিন দখল নেয় বিছানার। আর ছেলেরা পা ছড়িয়ে বসে মেঝেতে। কুর্ট বলে-
শোনো সবাই। কাল যদি আবহাওয়া ভালো থাকে তাহলে ব্রেকফাস্ট করেই আমরা বেরিয়ে পড়ব অভিযানে। সৈকতের পুবদিকের শেষপ্রান্তের গুহাগুলোই আমাদের লক্ষ্য। এসব গুহায় আমরা আগে যাইনি। তাই জায়গাটা চিনি না বললেই হয়। আমরা গুহাগুলো ঘুরে দেখব। বলা যায় না, পুরনো কোনো কিছু হয়ত পেয়েও যেতে পারি। তাহলে কী মজাই না হবে, তাই না?
সমর্থনের আশায় কথা থামিয়ে অন্যদের দিকে চাইল সে। দেখল, সবারই চোখ জ্বলজ্বল করছে। তার মানে এতে কারো আপত্তি নেই। ফাইন। বলল-
আমাদের এতে সময় লাগতে পারে। তাই বেশি সময় পাওয়ার জন্য ব্রেকফাস্ট করেই বেরিয়ে পড়তে হবে। ফিরতে হবে দুপুরে লাঞ্চের আগেই। নইলে দাদু-দাদি রাগ করতে পারেন। সেটা ভালো হবে না।
দরকার কী! বিজ্ঞের মত বলে ওঠে ন্যান্সি। দাদু-দাদিকে বলব যে আমাদের একটু দেরি হতে পারে। ফিরে আসার পর খাবো। কিন্তু দরকার হলে আমরা আজ সৈকতে লাঞ্চ করব। সে জন্য হালকা কিছু খাবার সাথে নিতে হবে।
ভালো বলেছিস তো! প্রশংসার চোখে ন্যান্সির দিকে তাকায় কুর্ট। তাহলে সকাল আটটার মধ্যেই বেরিয়ে পড়ব আমরা, কেমন? আজ ডিনার সেরে সকাল সকাল শুয়ে পড়তে হবে সবাইকে। ঠিক আছে?
ঠিক আছে। এক সাথে বলে ওঠে বাকি সবাই।
(চলবে)
0 coment rios: