Friday, December 28, 2018

অবস্থান নির্ণয়ের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি GPS.বিস্তারিত পড়ুন।

প্রযুক্তি বিশ্বের তাক লাগানো এক আবিষ্কার, জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম এর নাম হয়তবা আপনি এরমধ্যেই শুনেছেন। অনুসন্ধানী মানুষ কবুতরের মস্তিষ্কের গঠন থেকে এই আশ্চর্য জিনিস আবিস্কার করেছে। আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ১৯৭৭ সালে জিপিএস প্রযুক্তি আবিষ্কার করে। শুরুতে এর ব্যবহার একেবারেই সামরিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল। পরে সাধারন মানুষের ব্যবহারের জন্য এই প্রযুক্তি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

জিপিএস (GPS) কি?

জিপিএস (GPS) একটি কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। যেকোনো আবহাওয়াতে সময়ের সাথে পৃথিবীর যেকোনো স্থির বা চলমান বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করা এর প্রধান কাজ। জিপিএস এক ধরনের একমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা, এর ব্যবহারকারীরা উপগ্রহ থেকে পাঠানো সঙ্কেত শুধুমাত্র গ্রহণ করতে পারে কিন্তু নিজেরা উপগ্রহে সঙ্কেত পাঠাতে পারে না। আবিষ্কারের পরে মার্কিন সামরিক বাহিনী ও সামরিক পরিদপ্তর ধাপেধাপে এর উন্নয়ন ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মার্কিনীরা ১৯৯৫ সালে ২৪টি স্যাটেলাইটের সমন্বয়ে সৃষ্ট নেটওয়ার্ককে পৃথিবীর সব জায়গা থেকে ব্যবহারযোগ্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সিস্টেম হিসেবে ঘোষণা করে। অ্যামেরিকার হাওয়াইতে স্থাপিত স্যাটেলাইট ট্রেকিং ষ্টেশন থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনী এই স্যাটেলাইটগুলোর নিয়ন্ত্রন করে থাকে। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় বিশ হাজার উচ্চতায় এইসব স্যাটেলাইট ৬টি অরবিটে দিনে দুবার করে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে।

জিপিএস (GPS) কিভাবে কাজ করে?

ছয়টি অরবিট এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকে যে কোন সময় কমপক্ষে চারটি স্যাটেলাইট দৃশ্যমান হয় সাধারনভাবে। স্যাটেলাইটগুলো প্রতিনিয়ত দুধরনের সংকেত প্রেরণ করছে যেমন L1 ও L2। L1 হচ্ছে বেসামরিক ব্যবহারের জন্য, যার ফ্রিকোয়েন্সী ১৫৭৫.৪২ মেগাহার্জ। এই সংকেতের জন্য প্রয়োজন লাইন অফ সাইট। অর্থাৎ যোগাযোগের সময় স্যাটেলাইট ও রিসিভারের মাঝখানে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে । স্যটেলাইট থেকে সংকেতগুলো আসে আলোর গতিতে, প্রতিটি সংকেতে এর সেন্ডিং টাইম লেখা থাকে।
জিপিএস (GPS) কিভাবে কাজ করে?
জিপিএস (GPS) কিভাবে কাজ করে?
এই সংকেত গুলো গ্রহন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয় জিপিএস রিসিভারের মাধ্যমে। জিপিএস রিসিভারে আসা সংকেতটির রিসিভিং টাইম থেকে সেন্ডিং টাইম বিয়োগ করে সিগন্যালের রানটাইম নির্ণয় করা হয়। রানটাইমকে তিন লক্ষ দিয়ে গুণ করলে রিসিভার থেকে স্যাটেলাইটটির দুরত্ব জানা যায়। এভাবে চারটি স্যাটেলাইটের দূরত্ব নির্ণয় করে রিসিভার প্রতিটি স্যাটেলাইটের পজিশনকে কেন্দ্র করে, প্রতিটির দূরত্বকে এর ব্যাসার্ধ বিবেচনা করে চারটি ত্রিমাত্রিক বৃত্ত আকা হয়।
আদিকালে মানচিত্র, কম্পাস, স্কেল ইত্যাদি দিয়ে মেপে ও অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের সাহায্যে ভূপৃষ্ঠের কোন বস্তু বা স্থানের অবস্থান নির্ণয় করা হত। এইসব পদ্ধতি খুব নিখুঁত ছিল না স্বাভাবিকভাবেই। বর্তমানে জিপিএসের মাধ্যমে চমৎকারভাবে আগেরকার খুঁতগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।
ধরুন আপনি বাংলাদেশের কোন জায়গায় হারিয়ে গেলেন এবং আপনি জায়গাটির নাম জানেন না, আশপাশ চেনেন না। আপনি ঠিক করতে পারছেন না কোনদিকে যাবেন, কি করবেন। এসময় A নামে একজন লোকের দেখা পেলেন তারও আপনার দশা। তবে তার কাছে বাংলাদেশের একটা মানচিত্র আছে কিন্তু তা কোন কাজে আসছে না আপনাদের কারোরই। কারণ আপনারা কোন জায়গায় আছেন তা যদি জানতেন তাহলে তো মানচিত্র দেখে আশেপাশের শহর কোনটি, কোনদিকে যেতে হবে, কতদূর যেতে হবে –এইসব প্রশ্নের উত্তর নিমিষেই খুঁজে পেতেন।
এইসময় X, Y, Z নামে তিনজন সাহায্যকারীর দেখা পেলেন আপনারা । X বলল আপনারা ঢাকা থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে আছেন, কিন্তু ঢাকার কোনদিকে আছেন তা তিনি বলতে পারেননি। A তার মানচিত্রে ঢাকাকে কেন্দ্র করে ১২০ কিলোমিটারকে ব্যাসার্ধ মেনে একটি বৃত্ত আকলেন । ফলে যেসব জায়গার উপর দিয়ে বৃত্তের পরিধিটি আকা হয়েছে সেসব জায়গার কোন একটিতে আপনারা আছেন, এতটুকু বলা যায়। Y বললেন আপনারা বরিশাল থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরে আছেন, তিনিও কোন দিক জানাতে পারলেন না । A তার মানচিত্রে বরিশালকে কেন্দ্র করে ১৮০ কিলোমিটারকে ব্যাসার্ধ মেনে আরও একটি বৃত্ত আকলেন। কিন্তু একই সাথে X ও Yএর তথ্যকে সঠিক হিসেবে নিলে আপনাদের অবস্থান জামালপুর অথবা ময়মনসিংহের কোন একটি জায়গায় হবে। কারণ বৃত্ত দুটি পরস্পরকে এ দুটি জায়গায় ছেদ করেছে, যা বাস্তবে তো সম্ভব নয়। গাণিতিক ও জ্যামিতিক হিসাবে শুধুমাত্র এ দুটি জায়গা থেকেই ঢাকার দুরত্ব ১২০ ও রংপুরের দুরত্ব ১৮০ কিলোমিটার। এবার Z বললেন আপনারা সিলেট থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে আছেন। A তার মানচিত্রে আবার সিলেটকে কেন্দ্র করে ১৭০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ মেনে একটি বৃত্ত আকল। এই নিয়মে আমরা দেখতে পাচ্ছি বৃত্ত তিনটি পরস্পরকে শুধু একটি বিন্দুতে ছেদ করেছে, সেটি হল শরীয়তপুর। তিনটি বৃত্তের ছেদবিন্দু থেকে X, Y এবং Z তিনজনের তথ্যই সঠিক সেটা বোঝা গেল।
তিনটি বৃত্তের ছেদবিন্দু
তিনটি বৃত্তের ছেদবিন্দু
এখন আমরা এভাবে বলতে পারি যে, X, Y এবং Z নামের তিনটি স্যাটেলাইট থেকে প্রেরিত বিশেষ তথ্য A নামের GPS রিসিভার গ্রহণ করে গাণিতিক ও জ্যামিতিক হিসাবের মাধ্যমে ডিজিটাল মানচিত্রে আপনার বর্তমান অবস্থানটি উল্লেখ করার যে পদ্ধতি বা প্রযুক্তি তারই পূর্ণনাম গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা সংক্ষেপে জিপিএস। আপনার স্মার্টফোনের সাহায্যেই এই চমৎকার সেবা সম্পর্কে জানতে পারেন, এখনই!

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: