Sunday, December 23, 2018

খুদে বাহিনীর গুহা অভিযান - পর্ব- ৩


৩.
লাঞ্চের আগেই চলে গিয়েছিলেন জিম দাদু। লাঞ্চ সেরে বেরিয়ে পড়ে ওরা।
সৈকতের পুব দিকে বেশ কয়েকটি গুহা। সেগুলোর কোনো কোনোটিতে জোয়ারের সময় পানি ঢোকে। আবার কয়েকটি বেশ উঁচুতে বলে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে পারে না। সব মিলিয়ে দশ-বারোটা গুহা। কুর্ট তার বাহিনীর দিকে তাকিয়ে দেখল। এর আগে তাদের কারোরই গুহায় ঢোকার অভিজ্ঞতা হয়নি। ওর ইচ্ছে, সবাইকে নিয়ে প্রতিটি গুহা ঘুরে দেখবে। বিশেষ করে এ গুহাগুলো পুরনো হওয়ায় হয়ত এমন কিছু ওরা পেয়ে যেতে পারে যা মূল্যবান।

প্রথম গুহাটার ভেতরটা ভেজা, মেঝে পিছল। বোঝা গেল, জোয়ারের সময় এখানে পানি আসে। সেটা থেকে বেরিয়ে এল ওরা। দ্বিতীয়টিতে ঢুকল। একই অবস্থা। বেরিয়ে এসে ঢুকল আরেকটিতে। এটি খানিকটা উঁচুতে। মেঝে শুকনো, আকারে বেশ বড়। ওরা ঘুরে দেখতে লাগল। গুহার শেষ দিকটা অন্ধকারে গিয়ে মিশেছে। কুর্টের মনে হলো, এদিকটা এগিয়ে গেছে এমন এক দিকে যেদিক দিয়ে হয়ত বাইরে যাওয়া যায়। তার মানে এ গুহায় কেউ বা কারা সম্ভবত আসা-যাওয়া করে। এ সময় খুব শীত বোধ করতে থাকে সবাই। হঠাৎ করেই তার হাত ধরে টান দেয় ন্যান্সি। আঙুল তুলে দেখায় অন্ধকারের দিকে। কুর্ট তাকায় সেদিকে। তার মনে হয়, কারো ছায়া নড়ছে অন্ধকারে। কিন্তু কোনো শব্দ নেই। এ ছায়া কি মানুষের? নাকি ভূতের? ভয়ের শিহরণ বয়ে যায় কুর্টের শরীরে।
: এগুলো কী? কিছু বুঝতে পারছিস? খুব নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে ন্যান্সি।
মাথা নাড়ে কুর্ট-
: না।

এদিকে অন্ধকারে ছায়ার নড়াচড়া দেখে ভয় পেয়ে যায় লিন আর ডেভ। কাঁদতে কাঁদতে ডেভ বলে-
: আমার ভয় করছে। বাড়ি যাব।
তার সাথে সুর তোলে লিনও-
: এখানে থাকব না। আমি চলে যাব।
দু’জনে কাছে টেনে নেয় দু’ ভাই-বোনকে। ন্যান্সি খুব নিচু গলায় তাদের বোঝায়-
: কাঁদছিস কেন তোরা? ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা তো চারজন। সবাই তো সাহসী তাই না? তাহলে ভয় পাব কেন? কিন্তু তোরা যদি কাঁদতে থাকিস তাহলে কান্না শুনে দুষ্ট লোকেরা চলে আসবে, আমাদের ধরে ফেলবে।
ওদের কান্না থেমে আসে। ডেভ কুর্টের আর লিন ন্যান্সির হাত শক্ত করে চেপে ধরে।

ওরা যে সাথে করে দু’টি টর্চ নিয়ে এসেছিল তা খেয়ালই ছিল না। ন্যান্সিরই আগে মনে পড়ে। ব্যাকপ্যাক ছিল কুর্টের পিঠে। তাকে বলে-
: টর্চগুলো বের কর ভাইয়া।
: আরে তাই তো! আমার তো মনেই ছিল না।
দ্রুত হাতে ব্যাকপ্যাক থেকে টর্চ দুটো বের করে আনে কুর্ট। একটি নিজে নিয়ে অপরটি ন্যান্সির হাতে ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই আলোর দু’টি বর্শাফলক ছিঁড়ে ফেলে অন্ধকারের কালো পর্দা। সে আলোতে আরেকটু ভেতরের দিকে এগোয় ওরা। কয়েক গজ এগোনোর পর গুহার পথটি বেশ চওড়া হয়ে যায়। আরেকটু এগিয়ে বামে বাঁক নিতেই চমকে যায় ওরা। অনেকটা জায়গা নিয়ে বেশ বড় একটি গুহা। দু’টি পেট্রোম্যাক্স জ্বলছে। ফলে আলোকিত হয়ে আছে জায়গাটা। সেখানে বেশ কয়েকজন কঠিন চেহারার লোক মেঝেতে বিছানো ম্যাটের ওপর বসে। নানা রকমের অনেকগুলো প্যাকেট একদিকে জড়ো করে রাখা। মনে হয়, মাদকদ্রব্য আছে সেগুলোতে।
কুর্টের দল থমকে দাঁড়ায়। কাছেই একটি বিরাট পাথর। তার পেছনে লুকায় তারা। আগেই টর্চ নিভিয়ে দিয়েছিল কুর্ট আর ন্যান্সি। হঠাৎ লক্ষ করে যে তারা পাথরের পেছনে লুকালেও লিন তখনো কি করবে বুঝতে পারেনি। সে দাঁড়িয়ে আছে খোলা জায়গায়। সে মুহূর্তে লিনের পেছনের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে বিরাটদেহী এক ব্যক্তি। তার বিশাল দু’টি হাত তুলে নেয় লিনকে। তারপর তাকে ধরে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয় মেঝেতে বসে থাকা লোকগুলোর সামনে।
: আরে, এ কে? কোত্থেকে এল এখানে রিড?
নেতা গোছের এক লোক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
: তা তো জানি না বস। আমি গুহার পথটায় টহল দিচ্ছিলাম। এবার ফিরতেই একে এখানে দেখতে পেলাম।
কুর্ট আর ন্যান্সি বুঝতে পার এর ছায়াই তারা দেখেছিল।
নেতা লিনের দিকে তাকায়। কর্কশ গলায় জিজ্ঞেস করে-
: কে তুমি, কি নাম তোমার? কেন এসেছ এখানে?
লিন লোকটার প্রশ্নে ভয় পেয়ে কেঁদে ফেলে। ভীষণ বিরক্ত হয় লোকটি। রিডকে নির্দেশ দেয়-
: মেয়েটার দু’হাত ভালো করে বেঁধে কোথাও রাখ। তারপর তুমিও এস এখানে। জরুরি আলোচনা আছে।
এদিকে এ আকস্মিক ঘটনায় বিস্মিত হয়ে পড়ে কুর্ট ও ন্যান্সি। পরস্পরের দিকে তাকায় তারা- ভাবখানা এই যে এ কী হলো? অন্যদিকে ডেভ ভয় পেয়ে ন্যান্সির কানে ফিসফিস করে বলে-
: আপি! এবার কী হবে? ওরা কি লিনকে মেরে ফেলবে?
তাড়াতাড়ি ওকে থামায় ন্যান্সি। সে নিজেও ভয় পেয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও সান্ত¡না দেয় ডেভকে-
: না ভাই, ওর কিছু হবে না। আমরা ওকে উদ্ধার করব এখুনি।
পেট্রোম্যাক্সের আলো জ¦লতে থাকায় এদিকে অন্ধকার তেমন গাঢ় নয়। সবই মোটামুটি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। কুর্টের মাথায় লিনকে উদ্ধারের কথা ঘুরছে। চারপাশে তাকায়। দেখে, একদিকে বেশ কিছু আবর্জনা জমে আছে। তার মধ্যে রয়েছে কিছু ক্যানভাস কাপড়, পোড়া কাঠ ও কিছু দড়ি।
কুর্টের মাথার মধ্যে চিন্তা চলছে। ফিসফিস করে দু’জনের উদ্দেশে বলে-
: এখানে যেসব জিনিসপত্র আছে, এগুলো আমাদের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু খুব সাবধানে যাতে এ লোকগুলো কিছু টের না পায়। আমরা একজন একজন করে এগুলো বাইরে নিয়ে যাবো।
কুর্ট প্রথমে ন্যান্সিকে একটি বড় সাইজের পোড়া কাঠের টুকরো দেয়। ও সেটা নিয়ে বাইরে যায়। ন্যান্সির ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে কুর্ট। কিন্তু তার দেরি হচ্ছে দেখে ডেভকে কিছু কাঠ দিয়ে পাঠায় বাইরে। বলে-
: তুই ন্যান্সির কাছে যা, কোনো শব্দ করিস না যেন।
ভাই ওকে একটা কাজের দায়িত্ব দিয়েছে। বুকটা গর্বে ফুলে ওঠে ডেভের। উজ্জ্বল হয়ে ওঠে দু’ চোখ।
: ঠিক আছে। বেরিয়ে যায় ডেভ।
কিন্তু ভাগ্য খারাপ ডেভের। তার বয়ে নেয়া কাঠগুলো থেকে একটা বড় টুকরো কিভাবে যেন মেঝেতে পড়ে যায়। একটা শব্দ হয়। সাথে সাথে সতর্ক হয়ে ওঠে গুহার লোকগুলো। কথা বন্ধ হয়ে যায়। শব্দের উৎসের সন্ধানে তাকায় তারা। ভয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে কুর্টের। লোকগুলো যদি শব্দের কারণ খুঁজতে এদিকে আসে তাহলে ধরা পড়ে যাবে সে, সে সাথে ন্যান্সি আর ডেভও। কিন্তু না, কেন জানি লোকগুলো এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিল না।
[চলবে]

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: