Thursday, January 3, 2019

চাইলেও আর গাড়িতে গুমানো যাবে না!

নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কিংবা ঘুমিয়ে গাড়ি চালালে যাত্রী ও গাড়ির মালিকের কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছে যাবে। এমনকি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকলে স্টার্ট হবে না গাড়ি।
‘ড্রাইভার অ্যান্টি স্লিপ অ্যান্ড অ্যালকোহল অ্যালার্ম ডিটেক্ট’ নামে একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছানোয়ার হোসেন। অবিশ্বাস্য এ প্রযুক্তি আবিষ্কারের ফলে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কিংবা ঘুমিয়ে গাড়ি চালানোর দিন শেষ!
দীর্ঘ এক বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সফল হন তিনি। তার এ প্রযুক্তি প্রথমে কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত স্কিল কম্পিটিশনে এবং পরে রংপুরে বিভাগীয় স্কিল কম্পিটিশনে প্রথম স্থান অধিকার করে। ছানোয়ারের এ সাফল্যে খুশি সহপাঠী ও শিক্ষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যেকোনো গাড়ির ড্যাশবোর্ডের সঙ্গে কনসুলিং করে সম্পৃক্ত করা যাবে আইবিলিং ও অ্যালকোহল সেন্সর। চালকের সামনে এ আইবিলিং সেন্সর ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে চালককে ডিটেক্ট করবে।
পাশাপাশি গাড়ির সেলফের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে ম্যাগনেটিক রিলে। যা ঘ্রাণ সংবেদনশীল। চালক নেশাজাতীয় কোনো দ্রব্য ব্যবহার করলে সার্কিট অন হবে না। ফলে গাড়িও স্টার্ট হবে না। এ সেন্সরের সঙ্গে সর্বোচ্চ তিনটি মোবাইলে ডেটাসেট করা থাকবে। গাড়ি চলন্ত অবস্থায় চালক নেশা গ্রহণ করলে বা ঘুমিয়ে পড়লে তিন সেকেন্ডের মধ্যে সতর্কবার্তা মোবাইলে বেজে উঠবে। ফলে গাড়ির মালিক, ম্যানেজার বা সুপারভাইজার চালককে সতর্ক করতে পারবেন। এ অ্যালার্ম সিস্টেম দূরপাল্লার গাড়ির ভেতরেও সংযোগ করা যাবে।
এমন অবিশ্বাস্য প্রযুক্তি উদ্ভাবনকারী ছানোয়ার হোসেনের বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দহিলা বড়হাট পাড়ায়। তার বাবা আব্দুল আজিজ বাসচালক। তার বড় দুই ভাইও গাড়ির চালক। মা ছানোয়ারা বেগম মারা গেছেন। কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তৃতীয় পর্বের শিক্ষার্থী ছানোয়ার হোসেন।

এ প্রযুক্তি নিয়ে কথা হয় ছানোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, পরিবারে বাবা ও দুই ভাই গাড়িচালক। ড্রাইভিংয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে আমার প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা যায় কিনা সে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু করি। একপর্যায়ে দুর্ঘটনা রোধে একটি প্রযুক্তি প্রকল্প হাতে নিই। শিক্ষক ও কয়েকজন সহপাঠীর সহযোগিতায় অবশেষে ‘ড্রাইভার অ্যান্টি স্লিপ অ্যান্ড অ্যালকোহল অ্যালার্ম ডিটেক্ট’ প্রযুক্তি আবিষ্কার করি। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে শুধু দুর্ঘটনাই কমবে না; সেই সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটার আগেই আমরা কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারব।
কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিকস টেকনোলজি বিভাগের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর ও ছানোয়ারের শিক্ষক সুমন কুমার সাহা বলেন, ছানোয়ার হোসেনের আবিষ্কৃত ‘ড্রাইভার অ্যান্টি স্লিপ অ্যান্ড অ্যালকোহল অ্যালার্ম ডিটেক্ট’ প্রযুক্তি আসলেই অবিশ্বাস্য। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এ প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইতোমধ্যে রংপুর বিভাগীয় স্কিল কম্পিটিশনে এ প্রযুক্তি স্বীকৃতি পেয়েছে।
সুমন কুমার সাহা আরও বলেন, আমাদের ইনস্টিটিউটে ছানোয়ারের মতো অনেক প্রতিভাবান শিক্ষার্থী রয়েছে। যারা নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে চায়। কিন্তু একটি প্রজেক্ট তৈরি করতে যে ব্যয় হয়, তাদের পক্ষে সেটা সংকুলান করা সম্ভব হয় না। এ ব্যাপারে সরকার বা অন্য কোনো সংস্থা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ালে আরও নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে পারবে আমাদের শিক্ষার্থীরা।
এ প্রযুক্তির পজেটিভ দিক বিবেচনা করে কুড়িগ্রাম জেলা বাস ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সহিদুজ্জামান রাছেল বলেন, এ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে সড়কে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিতের পাশাপাশি মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব। সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ছানোয়ার আগামীতে এ প্রযুক্তির উন্নয়নসহ আরও নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারবে।
স্কিল কম্পিটিশনে ছানোয়ারের প্রযুক্তি দেখে মুগ্ধ কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন বলেন, গাড়ির চালকরা এ প্রযুক্তি ব্যবহার করলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে। চালকরা সতর্ক হবেন। জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। ছানোয়ার হোসেনের আবিষ্কৃত এ প্রযুক্তি আসলেই অবিশ্বাস্য।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: